রেসিপি - মাহমুদ হাসান
মৎস শিকার এক প্রকার সৌখিনতা আর এটি কোন পেশা নয়। আর এটাকে ঘিরে আমরা বিডিন্ন জিনিসের সংমিশ্রণ ঘটাই এবং এই শিকারের একটি মূল উপাদান হচ্ছে চার। চার হচ্ছে মূলত ইনভাইটেশন যেমনটা কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে আমরা পেয়ে থাকি যার মাধ্যমে কিছু টারগেটেড লোক আমরা জড় হই। সুতরাং ইনভাইটেশন ছাড়া বাকী উপাদান গুলো মুল্যহীন। তদ্রুপ মৎস শিকারের ক্ষেত্রে চারের উপাদান গুলো নিমন্ত্রণ এর কাজ করে যার মাধ্যমে আমরা কিছু নিদৃষ্ট প্রজাতির মাছকে আমন্ত্রণ করে থাকি। তেমনি সঠিক পদ্ধতিতে চার এবং তার উপাদান ছাড়া শিকারের বাকি সড়ঞ্জাম গুলোও মূল্যহীন হয়ে উঠে। তাই প্রজাতি ভেদে চারের ধরন মশলার উপাদান এবং পরিমান ভিন্ন হয়ে থাকে এর ব্যতিক্রম হলে মিশ্রনটি তার কার্যকারিতা হারায়। রই মৃগেল এবং কাতল তিনটি ডিন্ন প্রজাতির মাছ এদের ঘ্রাণ শক্তি এবং খাদ্যভ্যাসও ভিন্নতা লক্ষণীয়। তাই প্রতিটি প্রজাতির জন্য আলাদা মিশ্রনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যদি মনে করি সব প্রজাতির জন্য সব উপাদান একত্রিত করে একটি এটম বোম বানাবো যাতে সব মাছের জন্য তা কার্যকরী হবে সেটা ভূল ধারনা এবং মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু অসাদু ব্যবসায়ী তা করে থাকতে পারে। প্রত্যেক জিনিসেরই একটি নিদৃষ্ট ফরমুলার উপর নির্ভর করে হয়ে থাকে এবং তার ব্যত্যয় হলেই তাতে হিতে বিপরীত হয়। আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারি যে মিশ্রনটি উপস্থাপন করা হয়েছে কোন রকম ব্যতিক্রম না করে যদি সঠিক ভাবে আপনারা এপ্লাই করতে পারেন অবশ্যই ফলাফল আশানুরুপ হবে। তবে দেওয়ার মালিক আল্লাহ আমরা শুধু সঠিক পথে ভাল চেষ্টাটাই করতে পারি। আজকাল আমাদের যেটা চিত্র পুকুর ভরা মাছ থাকে কিন্তু আমার পয়েন্টে মাছ উঠে না ফলাফল পুকুর মালিকের গুষ্ঠি উদ্ধার তারপর মাছ না পাওয়ার নানা অজুহাত অথচ আমাদের ভূলটাকে সবসময়ই আড়াল করে রাখি। আপনি যে চার করলেন সেটা কতটুকু পারফেক্ট হলো, নাকি যে চার করলেন মাছ আসার বদলে উল্টো দিকে দৌড়াল, নাকি অপরিকল্পিত চার করার কারনে পয়েন্টই নষ্ট হরে গেল সেগুলো কখনোই আমরা এনালাইসিস করতে পছন্দ করি না যার কারনে আমাদের দুর্বল জায়গাটি শুধরে উঠতে পারি না। আল্লাহর রহমতে যে মিশ্রনটি দেওয়া হল তা অবশ্যই কার্যকরী হবে। কিন্তু কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে নিজে থেকে আরও অনেক কিছু এড করেন আর মনে করেন বেশী আইটেম এড করলেই আরও ভাল কিছু হবে তারা শুধুই অপচয় করবেন আর ফলাফল হবে হিতে বিপরীত। তবে এটাও ভাবার দরকার নেই আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়েছি মাছ হবেই হবে আর কিছু লাগবে না। বিভিন্ন কারনে মাছ হয়না ওগুলোও মাথায় রাখতে হবে এর মধ্যে আবহাওয়া একটা বড় ফেক্টর সেগুলো নিয়ে আশা করি একটি বিস্তারিত পোষ্ট পরবর্তীতে পাবেন। এবার মূল বিষয়ে আশা যাক।
রুই ও মৃগেলের চারের মূল উপকরন _
১) খৈল ১ কেজি(মৃগেলের জন্য ভাজবেনা)
২) একাঙ্গী ১৫০ গ্রাম(মৃগেলের ১০০ গ্রাম)
৩) আওভেল ১০০ গ্রাম(মৃগেলের ৫০ গ্রাম)
৪) বড় মেথি ২০ গ্রাম(মৃগেলের ১০ গ্রাম)
৫) গুড় বোজ ৫০ গ্রাম (মৃগেলের ১০০ গ্রাম )
৬) তাম্বুল ৫০ গ্রাম
৭) বুছকি ৫০ গ্রাম
৮) জটামাংশী ( ১০০ গ্রাম শুধু মৃগেলের জন্য)
৯) মিষ্টির গাদ পরিমান মত (রুইয়ের জন্য জ্বাল হবে মৃগেলের জন্য নয়।
১০) শুকনো পিপড়ার ডিম( শুধু মৃগেলের জন্য)
প্রস্তুত প্রনালীঃ
রুই মৃগেলের জন্য জন্য সব মশলা গুলো ভেজে গুড়ো করতে হবে, খৌলও ভেজে গুড়া করতে হবে ( মৃগেলের জন্য খোল ভাজবে না)। যদি আপনার গ্রাইন্ডার ব্লেন্ডার থাকে আপনি তা ঘরেই করতে পারবেন। সবগুলো গুড়া করে ভাল ভাবে তা মিক্সড করতে হবে। অবশ্যই তা রোদের মধ্যে বসে মিক্সড করতে হবে। মিষ্টির গাদ চুলায় হালকা জ্বাল দিতে হবে(মৃগেলের জন্য জ্বাল হবে না) প্রথমে এরপর পরিমান মত দিয়ে মাখা মাখা নরম করতে যতটুকু লাগে দিয়ে ভালভাবে মেশাতে হবে। এর পর পরিমান অনুযায়ী মিশ্রনটি পাত্রে ঢুকিয়ে পাত্রের মুখ এয়ার টাইট করে ১ মাস বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। ১ মাস পর মুখ খুলে প্রতিদিন রোদ খাওয়াতে হবে আরও একমাস। (মৃগেলের জন্য মুখ খোলার পর পিপড়ার ডিম ৫ ঘন্টা পেপারে রেখে রোদে শুকানোর পর উপরোক্ত মিশ্রনের পরিমান অনুযায়ী ৫০০ গ্রাম পলিথিনে ঢেলে চারের সাথে ভাল করে মিক্সড করতে হবে এর পর রোদ খাওয়াতে হবে) এর পর মোটামুটি আপনার চার ব্যবহার উপযোগী।
চার মিশ্রণ পদ্ধতি -
>> হাফ কেজি চারের সাথে হাফ কেজি ভাজা খৌল(মৃগেলের জন্য কাচা খৌল) আর হাফ কেজি চারের সাথে ১ কেজি লাল মাটি দিয়ে মিক্সচার করে পয়েন্টে ফেলতে হবে।
>> ১ কাটা ২ কাটার শিকারীরা যে জায়গায় বর্ষি ফেলবে শুধু র চার মারবেলের মত গোল করে ৩০ মিনিট পরপর ৩-৪ টা মারবে।
>> যদি রুই আরো বেশী আনতে চান আতপ চাল ভেজে গুরা করে ১৫০ গ্রাম ১ কেজি র চারের সাথে মিক্সচার করবেন।
<<<<দৃষ্টি আকর্ষন>>>
চার কখনো হাতে ধরবে না পরিষ্কার চামচ অথবা পলিথিন ব্যবহার করবেন। আর যে পাত্রে রাখবেন ভাল করে পরিষ্কার করে রোদ শুকিয়ে চার রাখতে হবে।
Comments
Post a Comment